1992 সালে ইন্টারনেট যখন একেবারে নতুন তখন আমেরিকার এক নভেলিস্ট Neal Stephenson ভার্চুয়াল রিয়ালিটির কথা সবার সামনে তুলে ধরে। একটা ভার্চুয়াল পৃথিবী যেখানে মানুষ তাদের ডিজিটাল অবতারকে ব্যবহার করে সেখানে থাকবে, ওই ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে উপভোগ করবে এবং অনলাইন গেম খেলবে। সেই সময় তিনি তার নাম দিয়েছিলেন ‘ The Metaverse ’।
যার প্রথম শব্দটা ‘ Meta ’ মানে হল ‘Beyond’এবং ‘Verse’ শব্দটা নেওয়া হয়েছে ‘Universe’ থেকে। সেই সময়তে তিনি যা বলেছিলেন তাঁর কথামতো এই মেটাভার্স ফিউচারে ইন্টারনেটকে রিপ্লেস করবে। তিনি আরো বলেন যে সবাই সেই সময়কার ডিসটোপিয়ান রিয়েলিটি থেকে একটু দূরে থাকার জন্য এই মেটাভার্সকে ব্যবহার করবে। তবে কী সেই Dystopian Reality ? সেই সময় তিনি যেটা বলেছিলেন সেটা হল গ্লোবাল ইকোনমিক একেবারে কোল্যাপস করে গেছে। বড় বড় দেশের গভমেন্ট তাদের ক্ষমতা হারিয়েছে এবং গুটিকয়েক বড় বড় করে কর্পোরেট কোম্পানির কাছে সমস্ত ক্ষমতা চলে গেছে।
মেটাভার্স কি
প্রায় 30 বছর আগে তিনি এ রকম ধরণেরই একটা চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন। বর্তমানে বিগটেক কোম্পানিগুলো তারই সেই ফিউচার ওয়ার্ল্ডকে বানানোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে ভাগ্যবশত সেই ডিস্টোপিয়ান রিয়ালিটি আমাদের কাছে নেই। বর্তমানে আমরা যখন এই ব্যাপারে কথা বলছি তখন বড় বড় কোম্পানি যেমন অ্যাপেল,মাইক্রোসফট,গুগল, ফেসবুক মেটা ভার্স তৈরীর দৌড়ে একে অপরের আগে থাকার চেষ্টা করছে। একটা ভার্চুয়াল পৃথিবী যেটা আমাদের ফিজিক্যাল পৃথিবীর সঙ্গে co-exist করবে। এমনকি Facebook তার নামও পাল্টে Meta করে দিয়েছে যাতে অন্য দেশ থেকে একটু আগে থাকতে পারে। digital Facts
অনেক ইউজারের কাছে এই মেটাভার্স একটা আইডিয়াল জায়গা যেখানে অনেকটা সময় কাটানো যেতে পারে। স্পেশালি এই সময় যখন সারা পৃথিবীতে একটা ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে। প্রায় দু বছর হয়ে গেল মানুষ ঠিকভাবে বাইরে বেরোতে পারছে না ঠিক যেমনটা আগে করত। অসুবিধার কিছু নেই চলে আসুন মেটাভার্সে যেটা আমাদের জীবনকে একেবারে রেভোলিউশনাইজ করে দেওয়ার প্রমিস করছে যা আমাদের ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ডেরই একটা এক্সটেনশন হতে চলেছে। তবে সত্যিই কি আমাদের এই মেটাভার্স দরকার ? আমাদের সত্যিই কি এমন একটা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে দরকার যা কেবল বড় বড় বিগ ডিক কোম্পানিগুলো কন্ট্রোল করবে ?আর এই মেটাভার্স আমাদের লাইফকে ইন্টারনেটর থেকেও আরও অ্যাডভান্স করে দিতে পারে।
2022
মেটাভার্সের বছর হতে চলেছে। একটা technology based augmented reality space যা ইন্টারনেটে আমরা যেভাবে সময় কাটাই সেটাকে একেবারে পাল্টে দেবার প্রমিস করছে। মনে করুন এমন একটা ইন্টারনেটে যাকে আপনি শুধু দেখছেন না বরং সেই
ইন্টারনেটের মধ্যে আপনি বাঁচছেন। আপনি অনুভব করতে পারছেন প্রত্যেকটা জিনিস। আপনার ডিজিটাল অবতার ওই মেটাভার্সের মধ্যে চলে যাবে এরপর সেখানে গিয়ে আপনি কোনো কিছু পড়া বা দেখার বদলে সেই জিনিসটাকে এক্সপেরিয়ন্স করতে পারবেন। সেই সাথে আপনার মত আরও অনেকে থাকবে যারা একসাথে ওই জিনিসটাকে এক্সপেরিয়ন্স করতে পারবে। চলুন ব্যাপারটাকে একটু ইজি করে বোঝার চেষ্টা করা যাক।
মেটাভার্স কিভাবে কাজ করে
মনে করুন লকডাউন চলছে আর আপনি আপনার পরিবারের থেকে অনেক দূরে আছেন। এমত পরিস্থিতিতে আপনি কিভাবে তাদের সঙ্গে টাচে থাকবেন ? বর্তমানে ভিডিও কল এমন একটা জিনিস যার সাহায্যে আমরা তাদের সবথেকে কাছে যেতে পারি। তবে অনেকের কাছে সেটাও অনেকটা কাছে নয়। যখন আপনার পরিবার একসঙ্গে ডিনারে বসবে একসঙ্গে খেতে যাবে সেই অনুভূতিটা আপনি ভিডিও কলের মাধ্যমে তো এক্সপেরিয়েন্স করতে পারবেন না। তবে
মেটাভার্স এই জিনিসটাকে পাল্টে দিতে চাইছে।
এখানে আপনি আপনার পরিবারের সঙ্গে একটা ভার্চুয়াল স্পেসে থেকে মিট করতে পারবেন,আপনি সেখানে তাদের সঙ্গে ছোট ছোট গেম খেলতে পারবেন,তাদের সঙ্গে কনভারসেশন করতে পারবেন যেটা আগে কখনোই সম্ভব ছিল না। অতএব প্রধান ব্যাপার হলো
ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা যে জিনিসটা দেখি বা শুনি
মেটাভার্সের মাধ্যমে আমরা সেই জিনিসটাকে এক্সপেরিয়েন্স করতে পারব। তবে ব্যাপারটা এতটাও নতুন নয় মাল্টিপ্লেয়ার ভিডিও গেমের মধ্যে এই ব্যাপারটা বহুদিন আগে থেকেই আছে আপনি যদি না জানেন তবে আপনার বাড়ির কোন ছোট বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন।
যারা
পাবজি বা
ফ্রী ফায়ার এর মত গেম খেলতে পছন্দ করে সেখানে তাদের ডিজিটাল অবতারের কাছে কয়েক লক্ষ লক্ষ টাকার সম্পত্তি আছে। তাদের কাছে দামি দামি গাড়ি আছে,বিভিন্ন ধরনের জামা প্যান্ট আছে,এমনকি বিভিন্ন ধরনের বন্দুক ও বন্দুকের স্কিনও তাদের কাছে আছে। ওই গেম গুলোতে বিভিন্ন ধরনের কারেন্সি চলে যেমন ধরুন পাবজির ক্ষেত্রে UC। এই কারেন্সি কে ব্যবহার করে তারা ওই গেমের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জিনিস কিনতে ও বেচতে পারে। তো ওটাও এক ধরনের ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে যেখানে আপনার ডিজিটাল অবতার থাকে। ঠিক একইভাবে পৃথিবীর অনেক বড় বড় গেমিং কোম্পানি যেমন
Roblox,Fortnite, grand theft auto তাদের নিজেদের ভার্চুয়াল ওয়ার্ল তৈরি করে রেখেছে।
যেখানে তাদের ভার্চুয়াল কারেন্সি চলে। হয়তো মেটাভার্সের মধ্যেও এরকম ধরনের কিছু গেমের এলিমেন্ট থাকতে পারে। তবে এটা একচুয়ালি কোন ভিডিও গেম হবে না। এটা হল একটা সাইবারস্পেস যেখানে রিয়েলিটি ইমাজিনেশন এর সঙ্গে মিশে যাবে। এখানে প্রত্যেকটা ক্যারেক্টার এক একটা রিয়েল হিউম্যান হবে কিন্তু তারা থাকবে একটা ভার্চুয়াল পৃথিবীতে। মার্ক জাকারবার্গ বলেছে যে মেটাভার্স একটা টেলিপোর্টেশন ডিভাইস এর মত কাজ করবে। যেখানে আপনি নিজের বাড়িতে থেকেই একটা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে এক্সপেরিয়ন্স করতে পারবেন। এর পরেই সাথে সাথে আমাদের কাছে আরও একটা প্রশ্ন উঠে আসে সেটা হল - কতগুলো ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড হতে চলেছে ?শুধু কি একটাই মেটাভার্স হবে নাকি অনেকগুলো মেটাভার্সেস থাকবে?
তবে বড় বড় কোম্পানিগুলো যেভাবে ইনভেস্ট করছে সেটা দেখে আমার মনে হয় যে আমাদের কাছে অনেক ধরনের চয়েজ থাকবে। বর্তমানে অনেক ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড এর কাজ চলছে। এদের মত ফেসবুক সবথেকে বড়ো বানাতে চাইছে। অ্যাপেলের কথা যদি বলা যায় তবে অ্যাপেল একটা অ্যাপেল গ্লাসের উপর কাজ করছে। এই অ্যাডভান্স গ্যাজেটটা মেটাভার্স এক্সপেরিয়েন্সকে আরো অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে চলেছে। খবর এসেছে যে গুগোলও একটা ইনোভেটিভ অগমেন্টেড ডিভাইস এর উপর কাজ করছে।
এইভাবে বিভিন্ন ধরনের
মেটাভার্স প্লাটফর্ম তৈরি হবে। এই রেসেতে মাইক্রোসফটও পিছনে পড়ে নেই। তারা একটা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড তৈরি করছে যার নাম তারা দিয়েছি ‘
Mesh’। তার সাথে ডিজনিও ‘
ডিজনিথিম’ মেটাভার্স তৈরি করছে। এটা ডিজনির মুভি এবং
স্ট্রিমিং সার্ভিসের একটা এক্সটেনশন হতে চলেছে। তবে শুধু বড় বড় কোম্পানির নয় বিভিন্ন দেশের গভারমেন্টও এই রেসেতে দৌড়চ্ছে। সাউথ কোরিয়ান গভমেন্ট এনাউন্স করেছে যে তারা একটা মেটাভার্স অ্যালায়েন্স তৈরি করতে চাই। তারা চাইছে যে বিভিন্ন ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডকে একটা জায়গাতে আনতে।
বার্বাডোজ বলে একটা দেশ আছে যারা মেটাভার্সের মধ্যে তাদের দেশের এম্বাসি স্টাবেলিস্ট করার কথা চিন্তা-ভাবনা করছে। আমেরিকার একটি শহর স্যান্টা মনিকাও ঠিক এরকম ধরনেরই কাজ করেছে। তরা চাইছে যে তাদের শহরের মত হুবহু শহর যেন মেটাভার্সের মধ্যে থাকে। অবিয়েসলি ওই শহরের ডিজিটাল ভার্সন যেখানে প্লেয়াররা ঐ শহরে লুকিয়ে রাখা বিভিন্ন ধরনের আইটেম খুঁজে বড় বড় রিওয়ার্ড পেতে পারে। অবিয়েসলি শহরের ডিজিটাল ভার্সনে। অতএব আপনি বুঝতে পারছেন সবকিছুই সব জায়গায় মেটাভার্সেই চলে যেতে চাইছে। সুতরাং এটা শুধুমাত্র একটা এক্সপেরিয়ান্স আর নেই এটা বাস্তবে আমাদের সামনে আসতে চলেছে। অতএব আপনার পছন্দ হোক আর না হোক এর সম্পর্কে ইনফরমেশন রাখা খুবই দরকারী।
|
মেটাভার্স |
তার সাথে আপনাদের এই
মেটাভার্স সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হবে। যেমন ধরুন কিভাবে এই মেটাভার্স অপরেট করবেন ? এই
মেটাভার্স কি আমাদের প্রাইভেসি দিতে পারবে? এটা কি ওপেনসোর্স হতে চলেছে ? আর এই মেটাভার্সের মধ্যে আমাদের কতটা সেফটি থাকবে বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য ? আমি এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করছি কারণ
মেটা ভার্সের মধ্যে অলরেডি ক্রাইম হওয়া শুরু হয়ে গেছে।
গত বছর ডিসেম্বরে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোর একজন মহিলা তার ফেভরেট গেম খেলার জন্য মেটাভার্সের মধ্যে এন্টার করেন। গেমের মধ্যে সে যখন এন্টার করে তখন তার ডিজিটাল অবতারের কাছে আরও একটা অবতার আসে। একটা অজানা ডিজিটাল অবতার। অচেনা ক্যারেক্টারটা তার কাছে আসে এবং তাকে হ্যারাস করে। ভদ্রমহিলা যখন তাকে আটকাতে চায় তখন সে বলে সে মেটাভার্সএ আছে আর এখানে সে যা ইচ্ছা করতে পারে। আর এটা একটা মাত্র ইন্সিডেন্টই নয়। একটা রিপোর্ট অনুযায়ী ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে প্রতি 7 মিনিটে এরকম ধরনের একটা করে ক্রাইম হয়। আর এখানেই ব্যাপারটা একটু প্রবলেমেটিক বলে মনে হয়।
তাই অনেকে মনে করছে যে এই
মেটাভার্স যখন ধীরে ধীরে বাড়বে তখন এরকম ধরনের ক্রাইমও ধীরে ধীরে বেড়ে যাবে। এই কারণে বড় বড় কোম্পানির কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তারা কিভাবে প্লেয়ারদের প্রাইভেসি ও সেফটিকে ইনসিওর করবে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো তারা বলে যে তারা 100 পার্সেন্ট প্রাইভেসি এবং সেফটি দিতে পারবে না।Andrew Bosworth যে মেটার এক্সিকিউটিভ
“Policing user behaviour at any meaningful scale is practically impossible ” তার এই স্টেটমেন্টের জন্য আমাদের এই প্রশ্নটি দিকে আরো একবার যেতে হয় এই
মেটাভার্স আমাদের কাছে কতটা সেফ হবে বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য।
এই কথাটা আমি বারবার বলছি কারণ বেশিরভাগ টেক কম্পানিই বাচ্চাদের বেশি টার্গেট করছে। বাচ্চাদের এবং টিনএজারদের যারা বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেটই কাটাচ্ছে। অনেক স্টাডি থেকে এটা প্রুভ হয়েছে যে মেটাভার্স বাচ্চাদের জন্য মোটেও সেফ জায়গা নয়। অনেক রিপোর্টে দেখা গেছে বাচ্চাদের সামনে এইট্টিন প্লাস সেক্সচুয়াল কনটেন্ট চলে আসে। এখান থেকে বাচ্চারা বিভিন্ন ধরনের গালাগালি শিখে যাচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন অজানা লোক বাচ্চাদের মধ্যে চরমপন্থী চিন্তাধারার ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আর এই সবকছুই
মেটাভার্সের মধ্যে হচ্ছে।
তার সাথে বড় বড় কোম্পানিগুলো বলছে এগুলোকে বন্ধ করা একেবারেই ইম্পসিবল। অতএব আমার কথা হলো যে মেটাভার্স আমাদের পৃথিবীকে সত্যিই ভালোর জন্য পাল্টে দিতে পারে তবে যদি আমরা সচেতন না থাকি তবে এই মেটাভার্সই আমাদের real-world কে ধ্বংস করে দিতে পারে। এটা ক্রিমিনালদের কাছে একটা টুল হতে পারে যার সাহায্যে তারা অনলাইনে ক্রাইম করতে পারে। সুতরাং ফিউচারে যদি আপনি মেটাভার্স ব্যবহার করেন তবে এইসব কিছুই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। আসলে টেকনোলজি ভালো বা খারাপ হয় না আমরা কিভাবে তাকে ব্যবহার করব সেটাই তার দিক দেখিয়ে দেয়।
Comments 0
EmoticonEmoticon